স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে কম্পিউটার ব্যবহার করার জন্য ব্যবহারকারীর আসন ব্যবস্থা ও শরীরের বিভিন্ন অংশের অবস্থান যথাযথ নিয়মে হওয়া উচিত। এর জন্য টেবিল, চেয়ার এবং মনিটরের একটি স্ট্যান্ডার্ড মাপ থাকা জরুরি। নিচে টেবিল, চেয়ার এবং মনিটরের স্বাস্থ্যসম্মত অবস্থান নিয়ে আলোচনা করা হলো।
টেবিলের আকার, আকৃতি ও ধরণ বিভিন্ন কর্মীর জন্য ভিন্নতর হলেও একটি আদর্শ টেবিলের সাধারণত যে সকল বৈশিষ্ট্য থাকা উচিত নিম্নে তাদের উল্লেখ করা হলো।
১. টেবিল সাধারণত কম উজ্জ্বল রংয়ের এবং অনাবশ্যক নকশা বিবর্জিত হবে। এটি গাঢ় কালো না হওয়াই বাঞ্ছনীয় কারণ ঐ রং চোখের জন্য পীড়াদায়ক এবং বিশেষ করে কম্পিউটার টাইপিস্টদের জন্য অসুবিধাজনক।
২. কম্পিউটার এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে টাইপ করতে কোনো অসুবিধা না হয়। তাছাড়া অধিকাংশ টাইপিস্ট হাতের ডান দিকে সংশ্লিষ্ট কাগজ রেখে তা টাইপ করেন। ফলে তার টেবিলের কম্পিউটার মেশিনের ডান দিকে যথেষ্ট খালি জায়গা রাখতে হবে। টেবিলে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ট্রের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে কর্মী তার নিকট আগত কাগজপত্রাদি একটি ট্রেতে এবং তার নিকট হতে অন্য জায়গায় স্থানান্তরিত হবে এমন কাগজপত্রাদি অন্য ট্রেতে রাখতে পারে।
৩. টেবিলের উচ্চতা প্রমাণ মানের হবে যাতে একজন স্বাভাবিক আকৃতির কর্মী কাজ করতে অসুবিধার সম্মুখীন না হন। বৃটিশ স্ট্যান্ডার্ড ইন্সটিটিউটের মতানুসারে টাইপিস্টদের জন্য ২৭ হতে ২৮ ইঞ্চি উচ্চতা বিশিষ্ট টেবিলই অধিকতর উপযোগী।
৪. কম্পিউটারের সিপিইউ রাখার জন্য নিচে ডান দিকে আলাদা একটি তাক বা ট্রে তৈরি করতে হবে। যাতে টাইপ করার সময় পা গুছিয়ে রাখতে না হয়।
১. চেয়ারের উচ্চতা সংশ্লিষ্ট টেবিলের উচ্চতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। তবে এই ক্ষেত্রে কর্মীর দৈহিক উচ্চতাও বিবেচ্য বিষয়। চেয়ারের আকৃতি ও উচ্চতা সম্পর্কে ব্রিটিশ ষ্ট্যান্ডার্ড ইনষ্টিটিউটের বর্ণনা এই ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে।
ক. ভূমি হতে উচ্চতা ১৬.৫” হতে ১৭.৫”
খ. সম্মুখ হতে পিছনের দূরত্ব ১৪.৫" হতে ১৬”
গ. চওড়া ১৬" হতে ১৭”
ঘ. বসার স্থান হতে পিঠ রাখার স্থানের উপর পর্যন্ত ১১” হতে ১১.৫"
ঙ. পিছন রাখার স্থানের প্রস্থ ১৪" হতে ১৫”
চ. আকৃতি-সম্মুখ ভাগ সোজা ও পিছন বৃত্তাকার
২. চেয়ারের পিছন ভাগ কর্মীর পিঠ যথাযথভাবে রাখার জন্য উপযুক্ত হতে হবে। বসা অবস্থায় কর্মীর মেরুদণ্ড যাতে সোজা থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত।
৩. চেয়ার বৃত্তাকারে ঘুরানোর উপযোগী করে প্রস্তুত করা উচিত। এতে যে সকল কর্মীকে কাজের জন্য এদিক ওদিক ঘুরতে হয় তাদের জন্য সুবিধা হয়। অধিকন্তু এটি ক্লান্তি অবসানের জন্য সহায়ক হয়।
৪. বসার জায়গা শক্ত হলে তাতে বেশিক্ষণ কাজ করা অসুবিধাজনক। এই জন্য গদিযুক্ত বা বেতের তৈরি চেয়ার কাঠের সাধারণ চেয়ারের তুলনায় কর্মীর নিকট অধিক পছন্দনীয়।
ব্যবহারকারীর চোখের দূরত্ব হতে মনিটরের দুরত্ব 20 ইঞ্চি থেকে 30 ইঞ্চি অর্থাৎ 50 সেন্টিমিটার থেকে 76 সেন্টিমিটার পর্যন্ত হওয়া উচিত। চেয়ারে বসা অবস্থায় হাত সোজাসুজি সামনের দিকে ধরে বৃদ্ধাঙ্গুলি বরাবর দূরত্ব ধরে আনুমানিকভাবে 20 ইঞ্চি পরিমাপ করা যায়।
মনিটরের উচ্চতা এমন হওয়া উচিত যেন স্ক্রিনের উপরিভাগ ও ব্যবহারকারীর চোখ একই সমতলে থাকে। স্ক্রিনের মাঝামাঝি অংশে দেখার জন্য চোখ সামান্য নিচের দিকে তাকানো উচিত। তীব্র বা অসহনীয় আলো পরিহার করার জন্য মনিটরের উজ্জ্বলতা নিয়ন্ত্রণ করা এবং কম্পিউটারের কক্ষের আলো সহনীয় বা কাজের উপযোগী করে ঠিক করে নেয়া উচিত।
আলোর উজ্জ্বলতা কোনরূপ পরিবর্তন না হলে মনিটরকে পিছনের দিকে 10° থেকে 20° কাত করা যেতে পারে। এতে মনিটরের উপর থেকে নিচের দিকে দৃষ্টিপাত মনিটর থেকে ব্যবহারকারীর চোখের দূরত্ব সর্বত্র প্রায় সমান থাকবে। তবে দূরদৃষ্টি ও ক্ষীণদৃষ্টি উভয় সুবিধা সম্বলিত চশমা (bifocal) ব্যবহারকারীদের ক্ষেত্রে এই পরিমাপ 33 থেকে 45° হওয়া উচিত। স্ক্রীন (এলসিডি প্যানেলকে) এমন অবস্থানে (অ্যাঙ্গেলে) রাখতে হবে যাতে স্বাচ্ছন্দ্যময় হয়।
🚻 ১. একক কাজ : একটি ত্রুটিপূর্ণ চেয়ারে বসে কম্পিউটারে কাজ করলে তোমার কি শারীরিক সমস্যা হতে পারে?
২. দলগত কাজ : শিক্ষার্থীরা ক্লাসে দুই দলে বিভক্ত হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার পক্ষে-বিপক্ষে একটি বির্তকের আয়োজন করো।